যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় নর্ধারিত কিছু শর্ত ও রােকন আদায়ের মাধ্যমে রােজা সম্পন্ন করতে হয়। এসব শর্ত ও রােকন পাওয়া না গেলে ব্রোল্লা ভেঙে যায় এবং তা বাতিল বলে গণ্য হয়। শরিয়ত অনুমােদিত কারণ ছাড়া কোনাে ব্যক্তির জন্য রােজা ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহ। ইসলামী শরিয়তে রােজা ভঙ্গ করার প্রতিবিধান রাখলেও তার শত ভাগ ক্ষতিপুরণ সম্ভব নয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি (শরিয়ত অনুমােদিত) কোনাে কারণ ছাড়া বা রোগ ছাড়া রমজান মাসের একটি রােজা ভেঙে ফেলে, তার পুরাে জীবনের রােজা দিয়েও এর ক্ষতিপূরণ হবে না।
যদিও সে জীবনভর রােজা রাখে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭২৩)। কোরআনে রােজা ভাঙার কারণ :ব্রোজা অবশ্য পালনীয় বিধান ও তা ভঙ্গ হওয়া বিষয়ে কোরআনের হােফণা হলাে, রােজা রাতে তােমাদের জন্য -সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তােমাদের পরিচ্ছল এবং তােমরা তাদের পরিচ্ছল। আল্লাহ জানেন যে তােমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। অতঃপর তিনি তােমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হয়েছেন এবং তােমাদের অপরাধ ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন তােমরা তাদের সঙ্গে সঙ্গেত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন কামনা করাে।
আরও পড়ুনঃ মালয়েশিয়ায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করলো রেমিট্যান্স যোদ্ধা সাইদুল!
আর তােমরা পানাহার করাে যতক্ষণ রাতে করে থেকে যার অরেখা স্পষ্টরূপে তােমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়। অতঃপর রাত আসা পর্যন্ত রােজা পূর্ণ কোরাে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : p৮৭) উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ রােজাদার তিনটি বিষয় থেকে বিরত থাকতে বলেছেন—ক. গ্রীসম্ভোগ, খ খাবার গ্রহণ, গ. পানীয় গ্রহণ। সুতরাং কেৱী-সম্ভোগ ও পানাহারে লিপ্ত হলে তার ব্লোজা ভেঙে যাবে। এ ছাড়া আলেমরা এ বিষয়ে একমত যে ‘হায়িজ” বা নারীদের ঋতুস্রাবের কারসেও রােলা ভেঙে যায়।
রােজা ভাঙার প্রতিবিধান : যেসব কারণে ব্রোঞ্জা ভেঙে যায় প্রতিবিধানের বিচারে তা দুই প্রকার।
এক. যার কারণে রােজা ভেঙে যায় এবং তার প্রতিবিধান হিসেবে কাজা ও কাফফারা (ক্ষতিপুরণ) উভয়টি আদায় করতে হয়। তা হলাে – সম্ভোগ ও ইচ্ছাকৃত পানাহার। কেউ যদি ইচ্ছা করে রমজান মাসের দিনের বেলা স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে অথবা পানাহার করে তবে তার রােজা ভেঙে যাবে। তার প্রতিবিধান হিসেবে ব্যক্তিকে ব্রোঞ্জার কাজা ও কাফফারা করতে হবে। তবে ইমাম শাফেয়ি ও আহমদ (রহ.)-এর মত হলাে কেউ ইচ্ছা করে কিছু খেলে শুধু কাঙ্গা করবে। কাফফারা দিতে হবে না। তাদের মতে, শুধু প্রী-সম্ভোগের কারণেই রােজার কাফফারা ওয়াজিব হয়।
ল্লেখ্য, ওষুধ ও ধূমপান পানাহারের অন্তর্ভুক্ত এবং স্বেচ্ছায় যেকোনাে প্রকার বীর্যপাত স্ত্রী-সঙ্গমের অন্তর্ভুক্ত। কোনাে স্বামী যদি কে সহবাসে বাধ্য করে তবে স্ত্রী শুধু রােজা কাজা করবে এবং স্বামীর কাঙ্গা-কাফফারা দুটোই করবে।
দুই. যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হলে প্রতিবিধান হিসেবে শুধু কাঙ্গা করতে হয়, কাফফারা দিতে হয় না। এমন কিছু কারণ হলাে—১. ইচ্ছা করে বমি করা, ২. বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা, ৩. মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব, ৪. ইসলাম ত্যাগ করলে, ৫. গুকোজ বা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন দিলে,
৬. কুলি করার সময় অনিচ্ছায় গলার ভেতর পানি প্রবেশ করলে, ৭. শ্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে, ৮. রােজাদাকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ালে, ৯ রাত অবশিষ্ট আছে মনে করে সুবেহ সাদিকের পর পানাহার করলে, ১০. ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে, ১১. মুখ ভরে বমি করলে, ১২. ভুলবশত কোনাে কিছু খেয়ে, ব্রোঞ্জা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছা করে আরাে কিছু খেলে, ১৩. বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেললে, ১৪. কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে, ১৫. জিহ্বা দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে ছােলা পরিমাণ কোনাে কিছু বের করে খেয়ে ফেললে, ১৬. অল্প বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে, ১৭- ক্লোজ সারণ থাকা অবস্থায় অজুতে কুলি বা নাকে পানি দেওয়ার সময় ভেতরে পানি চলে গেলে।
(ফাতাওয়ায়ে শামি ও ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)রােজার কাজা ও কাফফারা ? : রােজার কাজা হলাে ভেঙে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা ব্রোজার প্রতিবিধান হিসেবে শুধু রােজ আদায় করা। অতিরিক্ত কিছু আদায় না করা। অন্যদিকে রােজার কাফফারা হলাে প্রতিবিধান হিসেবে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করা। রােজার কাফফারা বিষয়ে আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তােমার কী হয়েছে? সে বলল, আমি রোজা অবস্থায় আমার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, স্বাধীন করার মতাে কোনাে ক্রীতদাস তুমি মুক্ত করতে পারবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেন, তুমি কি একাধারে দুই মাস সওম পালন করতে পারবে? সে বলল, না।
এর তিন বলেন, ৬০ জন মিসকিন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল না। হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, তখন নবী (সা.) থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী (সা.)-এর কাছে এক ‘আরাক পেশ করা হলাে যাতে খেজুর ছিল। আরাক হলাে বুড়ি। নবী (সা.) বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেন, এগুলাে নিয়ে দল করে দাও। তথন লােকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমার চেয়েও বেশি অভাবগ্রস্তকে সাদকা করব? আল্লাহর শপথ, মদিনার উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবগ্রস্ত কে নেই। রাসূল (সা.) হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত দেখা গেল।
অতঃপর তিনি বললেন, এগুলাে তোমার পরিবারকে খাওয়াও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস :১৯৩৬)
বেশির ভাগ ফকিহ বলেন, হাদিসে বর্ণিত ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক। অর্থাৎ রােজা ভঙ্গকারী পাস মুক্ত করতে অক্ষম হলে দুই মাস রােজা রাখবে। আর দুই মাস রোজা রাখতে ব্যর্থ হলে ৬০ জন মিসকিনকে খাবার খাওয়াবে।
আপনার মতামত জানান