আইন কার্যকর হলেই নিরাপদ সড়ক হবে ইলিয়াস কাঞ্চন।

আইন কার্যকর হলেই নিরাপদ সড়ক হবে ইলিয়াস কাঞ্চন।

আইন কার্যকর হলেই নিরাপদ সড়ক হবে ইলিয়াস কাঞ্চন।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, বাংলাদেশে যারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, তাদের কেউ দীর্ঘ ৫০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে মােটেই গুরুত্ব দেননি। প্রথমে তারা জানতই না সড়ক দুর্ঘটনাকে আইন ও নিয়মনীতির মাধ্যমে প্রতিরােধ করা যায়। অনেক সময় মন্ত্রীকেও বলতে শােনা গেছে ‘আল্লার মাল আল্লায় নিয়ে গেছে। তখন এটাই তাদের মানসিক ‘সেটআপ’ ছিল।

আমি আন্দোলন শুরুর পর এ ধারণা থেকে তাদেরকে বের করতে পেরেছি। নিরাপদ সড়কের জন্য ১১১ টি সুপারিশ বিভিন্ন মেয়াদে বাস্ত”বায়ন, আইন বাস্ত”বায়নকারী সংস্থা”কে সক্ষমতা অর্জন এবং নতুন (আইনে বাস্তবায়ন) হলেই (সড়ক নিরাপদ) হবে। সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের দেয়া ১১১ টি সুপারিশের মধ্যে ২৩টি প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে ছয়টি, এরপর ১৭টি নির্দেশনা দিয়েছেন।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও বাস্তবায়িত হয়নি। এখানে প্রধানমন্ত্রীকেও কঠোর হওয়ার প্রয়ােজন ছিল। হাইকোর্টের নির্দেশনাও মানা হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশনা যখন মানা হয়নি, তখন হাইকোর্টেরও ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারাও পরে আর কিছুই করেননি। এ বিষয়গুলাে পরিবহন সেক্টরকে আরাে বেশি স্বেচ্ছাচারী করে তুলেছে। গত ৫০ বছরে সরকারিভাবে আমাদের পরিবহন সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা হয়নি।

পরিবহন ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতাে করে ব্যবসা করছেন, সংগঠন করছেন, পেশিশক্তি দেখিয়ে ফায়দা লুটছেন। আইন প্রয়ােগের কথা উঠলেই ধর্মঘট ও আন্দোলনের ভয় দেখায়। পরিবহন সেক্টরটি এখন এতই শক্তিশালী যে, সরকারও এদের বিরুদ্ধে কোনাে কথা বলতে চায় না। সরকার শক্ত অবস্থানে না গেলে আইন বলবৎ হবে না।

সরকার সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান না নেয়ার কারণে আমরা পেছনে পড়ে আছি। সড়ক উন্নয়ন হয়নি। আইন বাস্তবায়ন করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। দায়িত্বশীলরা পরিবহন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে উদাসীনতা দেখান। সারা পৃথিবীতে আইন প্রয়ােগের ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় এবং আইন মানানাের জন্যও বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ, গাড়ির ফিটনেস থাকতে হবে। এসব কারণে উন্নত দেশগুলাে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সফল হয়েছে। আমরাও এ বিষয়গুলাে বাংলাদেশ সরকারকে বোঝানাের চেষ্টা করেছি। এতে এখন সবাই সড়কের ভয়াবহতা কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছেন। সড়কের সঙ্গে মানুষের জীবন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে এবং সড়ক হচ্ছে উন্নয়নের পূর্বশর্ত।

উন্নত দেশগুলাে সড়কের জন্য যে পরিমাণ বাজেট রাখে, আমাদের দেশে তা রাখা হয় না। তারা সড়কের এই খরচকে ‘ব্যয়া’ না বলে বিনিয়ােগ’ বলে। কারণ জীবন রক্ষার জন্য ইনভেস্ট করা হয়। আমাদের দেশে সড়ক নির্মাণের সময় জীবন বাঁচবে কিনা তার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় না। দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ সড়কের জন্য আইন প্রণয়নের চেষ্টা করেছি। আইনটি বাক্সবন্দী হয়ে ছিল।

স্কুলের শিক্ষার্থীরা মারা যাওয়ার পর আন্দোলনের মুখে ধাক্কা খেয়ে আইনটি পাস হয়। কিন্তু এক বছর পর আইন বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশের পরও নানা অজুহাতে এখনাে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। সরকারের যারা আইনটি বাস্তবায়ন করবেন, তারা চুপ হয়ে আছেন। কারণ, তারা আইন বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত উপযুক্ততাই অর্জন করতে পারেননি। আইনে আছে, কোনাে চালক অপরাধ করলে তার স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটা

অপরাধ করলে মালিক”কে জরি”মানা গুনতে হয়. চালকের ক্ষ”তি হয় না.. তাই সে বারবার অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে। পয়েন্ট কাটলে একপর্যায়ে চালকের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত হবে। তখন সম্পূর্ণ নতুনভাবে আবার চালককে পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। দুঃখের বিষয়, পয়েন্ট কাটার জন্য যে ‘পজ মেশিনের প্রয়ােজন তা এনে বিআরটিএ সেই সক্ষমতাই অর্জন করতে পারেনি, স্মার্ট লাইসেন্স তৈরি করতে পারেনি। পুলিশও এ কাজের জন্য এখনাে প্রস্তুত না।

আরও পড়ুনঃ S.R কুরিয়ার সার্ভিস সকল ব্রাঞ্চের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার

সড়ক আইনের জন্য বিধি প্রয়ােজন। এই বিধি এখন পর্যন্ত প্রণীত হয়নি। বিধির মধ্যে আইনকে দুর্বল করা, কারাে জন্য কঠোর করা, আবার কারাে জন্য সহজ করা হলাে কিনা তা দেখতে হবে। তাই বিধি প্রণয়ন ও যাচাইবাছাই খুবই জরুরি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসবের কোনাে কাজই হয়নি। ২৭ বছর ধরে ফুটপাত দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এখনাে ফুটপাত দখলমুক্ত হয়নি। মেয়র আনিসুল হক মাত্র দেড় বছরে পরিবহন চলাচলের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছেন, অনেক কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। এখনাে তার পরিকল্পনা নিয়ে সবাই কথা বলে, কিন্তু কাজ করছেন না।

আপনার মতামত জানান

শেয়ার করুনঃ

খুজুন




সর্বাধিক পঠিত

© ২০২০ | নিউজ ইবিডি ২৪ কর্তৃক সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত 
Design BY NewsTheme