গাজর চাষের যেন বিপ্লব ঘটেছে মানিকগঞ্জের এর সিং গাইর উপ”জেলায়। প্রতিটি গ্রামে’ই কম বেশি চাষ হয় মূল জাতীয় এই সবজির। লাভ জন”কহওয়ায় দিন”দিন কৃষকের মাঝে আগ্রহ ও বাড়ছে গাজর চাষে । শীত মৌসুমে এই এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল গাজর।
সারাদেশেই গাজরের চাহিদা রয়েছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সীমিত আকারে রফতানিও হচেছু মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। কৃষি অফিস ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিংগাইর উপজেলায় গাজর চাষ শুরু হয়দুই দশক আগে। প্রথমদিকে শুধুজয়মন্ডপইউনিয়নে স্বল্প পরিসরে এর চাষাবাদ শুরু হয়। কম খরচে লাভ বেশিহওয়ায় ধীরে ধীরে গাজর চাষে আগ্রহ বাড়ে কৃষকদের। ছড়িয়ে পড়ে উপজেলার প্রায় সব গ্রামে। গাজর চাষ করে অনেক পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। হয়েছে কর্মসংস্থানও। উপজেলার জয়মন্ডপ, কিটিংচর, লক্ষীপুর, নীলটেক, মেদুলিয়া, ভাকুম, কানাইনগর, মােসলেমাবাদ, বিন্নাড়াঙ্গী, চর দুর্গাপুরসহ বেশকয়েকটি গ্রামের প্রায় হাজারেরও বেশিক্ষক গাজর চাষের সঙ্গে জড়িত। গাজর চাষি কানাই ‘লাল’, আকবর ও রশিদ দের সাথে কথা হলে তারা জানান , অন্যফসলের চেয়ে গাজ’র চাষ লাভজনক বেশি। মাত্র দুই থেকে আড়াই মাসে ফসল তােলা যায়। গাজর তুলে ধান চাষ করেন তারা। প্রতি হেক্টর জমিতে গাজর উৎপাদন হয় ১৮ থেকে ২০ টুন।খেতে থাকা অবস্থায়ই ব্যবসা”য়ীরা চাষিদের গাজর কিনে নেন।
গাজর তুলতে কোনাে ঝক্কিঝামেলা নেই। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীদেরও গাজর তুলতে কোনাে শ্রমিক লাগেনা। কারণ গােখাদ্যের জন্য গাজর পাতার উপরের অংশ) বেশ চাহিদা রয়েছে স্থানীয়দের কাছে। গরুর খামারীরাই খেত থেকে গাজর তুলে দিয়ে পাতানিয়ে যান। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দিক জানান, এ অঞ্চলে কিংঅরেন্স নামে হাইব্রিড গাজর বেশিফলন হয়। এবীজ জাপান থেকে আমদানিকরা। প্রতি কেজি বীজ কৃষকদের কিনতে হয়১২ হাজার টাকায়। এক কেজি বীজ একবিঘা জমিতে বপন করা যায়। প্রতি বিঘায় গাজর চাষে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। লাভ থাকে প্রায় দ্বিগুণ। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সিংগাইর উপজেলার গ্রামে গ্রামে এখন খেত থেকে গাজর তােলা, ধােয়া এবং বাজারজাত করার মহাকর্মযজ্ঞ চলছে। গ্রামের নারী-পুরুষ জমি থেকে দল বেঁধে গাজর তুলছেন। পাতা কেটে নিচ্ছেন।
আবার সেই গাজর বিভিন্ন খাল-বিলের পাশেকিংবা বাড়িতে গর্ত করে ধােয়া হচ্ছে।শ্রমিকরা সারিবদ্ধভাবে বসেবিশেষ কায়দায় গাজর পরিষ্কার করছেন। এরপর ট্রাকেবিভিন্ন আড়তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গাজর। বছরের এই সময়ে শুধু গাজর ধােয়ার জন্য রাজশাহী, নাটোর, পাবনাসহ বিভিন্ন জেলার শ্রমিক আসেনসিংগাইরে। ১০০ টাকা বস্তা চুক্তিতে তারা গাজর তুলে ধুয়ে বাজারজাত উপযােগী করেন।ঢাকার কারওয়ান বাজারের ব্যাপারী আমজাদ হােসেন। জয়মন্ডপ গ্রামে এসেছেন গাজর কিনতে। তিনি বলেন, মানিকগঞ্জের সুস্বাদু গাজরের চাহিদা অনেক। রাজধানীর পাশেই হওয়ায় তারা এখান থেকে প্রতি বছর গাজর কিনে নেন। একই”ভাবে কারওয়ান বাজার এ, শ্যাম”বাজার, মিরপুর ও সাভারের পাইকা”রি আড়তে এই গাজর সরবরাহ করা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, সীমিত আকারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলােতেওসিংগাইরের গাজর রফতানি হচ্ছে। নিজ এলাকার চাষিদের গাজর সংরক্ষণের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে”জয়”মন্ডপ এলাকায় একটি হিমাগার তৈরি করেছেন সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। মধু-উজালা নামের ওই হিমাগারে সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিকটন আলু এবং গাজর রাখা যায়।
চাষিরা বলেন, সংরক্ষণের ব্যবস্থা কম থাকায় তারা স্বল্প মূল্যেই গাজর বিক্রি করতে বাধ্য হন। এই এলাকায় আরও হিমাগার নির্মাণ করা হলে কৃষকরা বেশি লাভবান হতেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, সিংগাইর উপজেলায় ২০১৮ সালে ১ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে গাজর চাষ হয়। ২০১৯ সালে গাজর চাষ হয়১ হাজার ১১৭ হেক্টর জমিতে এবং চলতি বছরও একই পরিমাণ জমিতে গাজর চাষাবাদ হয়েছে। সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টিপুসুলতানজানান, সিংগাইর উপজেলার মাটি এবং আবহাওয়া গাজের চাষের উপযােগী। এজন্য গাজর চাষে কৃষকরাউৎসাহিত হন। তাছাড়া গাজর চাষ অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভজনক। বিক্রি নিয়েও চাষিদের কোনাে ঝামেলা নেই। খেত থেকেই গাজর কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল এখন গাজর। প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি টাকার গাজরবিক্রি হয় এ উপজেলা থেকে তিনি বলেন, কীভাবে গাজর চাষিরা পরিকল্পিত চাষাবাদের মাধ্যমে আরও ভালাে ফলন পেতে পারেন সে ব্যাপারে তারা পরামর্শও সহযােগিতাকরেন।
আপনার মতামত জানান