দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতালে নেই কোন লাইফ সাপাের্টের ব্যবস্থা। উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ হাসপাতালে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য হাসপাতালে গড়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ শয্যা থাকতে হবে। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের শয্যা মিলে এ হার এখন শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি হাজার মানুষের জন্য হাসপাতাল’ শয্যা একটির নিচে।
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও করুণ পরিস্থিতির তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরাের (বিবিএস) এক জরিপে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটরিয়ামে সার্ভেজ অ্যান্ড স্টাডিজ রিলের্টিং টু জিডিপি রিবেইজিং ২০১৫-১৬ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান জরিপ ২০১৯-এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
জরিপের তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়ােগ বেড়েছে। ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলােতে শয্যার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রতি হাজারে শূন্য দশমিক ৬৪টি। আর সরকারি হাসপাতালগুলাের গড়ে শূন্য দশমিক ৩২টি। প্রতি একজন চিকিৎসকের (ভেন্টাল সার্জন বাদ দিয়ে) বিপরীতে মাত্র শূন্য দশমিক ৮ জন সেবিকা রয়েছেন। ডেন্টাল সার্জনদের অন্তর্ভুক্ত করলে প্রতি একজন চিকিৎসকের বিপরীতে সেবিকার সংখ্যা শূন্য দশমিক ৮৩, জন। শয্যা ও সেবিকার অনুপাত, প্রতি ৩ , দশমিক ৪৭, টি বা প্রায় চারটি শয্যার জন্য একজন সেবিকা দায়িত্ব পালন করছেন।
গতকালের জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিবিএসের মহাপরিচালক মােহাম্মদ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল খালেক।
জানা গেছে, দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলােতে ১ লাখ ৫ হাজার ১৮৩, টি শয্যা রয়েছে। এসব শয্যার মধ্যে সাধারণ ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, নন-এসি একক শয্যা কেবিন ১৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, নন-এসি দুই শয্যা কেবিন ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ, এক শয্যার এসি কেবিন ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং দুই শয্যার এসি কেবিন ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। বেসরকারি ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক, ভায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল মিলে জনস্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ১৬ হাজার ৯৭৯টি। এসব হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৫, দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ হাসপাতালে লাইফ সাপাের্টের ব্যবস্থা আছে। আর উন্নত লাইফ সাপাের্টের ব্যবস্থা আছে মাত্র ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ হাসপাতালে।
বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ৩০ জুন ২০১৮ সাল পর্যন্ত মােট ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮০ জন কর্মী নিয়ােজিত ছিলেন। এদের মধ্যে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৪১ জন বা ৮৫ দশমিক ৭২ শতাংশ পূর্ণকালীন এবং ৫২ হাজার ৬৩৯ জন বা ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ খণ্ডকালীন। নিয়ােজিত মােট জনবলের মধ্যে হাসপাতালে। নিয়ােজিত মােট জনবলের মধ্যে হাসপাতালে ৫৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, রােগনির্ণয় কেন্দ্রে ৩৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং ক্লিনিকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আর ডেন্টাল ক্লিনিকে নিয়ােজিত জনবল ১ দশমিক ১৯ শতাংশ বলে বিবিএসের জরিপে উঠে এসেছে।
মহা পরিচালক মােহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, জরিপে নানা কারণে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। হাসপাতালগুলাের কর্তৃপক্ষ যে হিসাব দেয় হাসপাতালগুলাের কর্তৃপক্ষ যে হিসাব দেয়, সেগুলােই আমাদের হিসাবে নিতে হয়। এক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেছনে বেসরকারি হাসপাতালগুলাে আসলে কত ব্যয় করে তার সঠিক তথ্য নাও উঠে আসতে পারে।
মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য খাত দেশের মােট দেশজ উৎপাদনে কী পরিমাণ ভূমিকা রাখছে তার একটা হিসাব পাওয়া গেছে।
আপনার মতামত জানান