অর্থনৈতিক কার্যক্রমেনারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণবিশ্ব অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তনআনতে পারে। যদিও বেশির ভাগ দেশেই অর্থনৈতিক কার্যক্রমে পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে আছেননারীরা। বর্তমানেবিভিন্ন দেশের সরকারবিষয়গুলাে অনুধাবন করে অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানাের উদ্যোগনিয়েছে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, নারীরা যদি পুরুষদের মতাে একই স্তরের শিক্ষিত হন এবং একই সংখ্যক চাকরি পান, তাহলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে ২০ ট্রিলিয়ন ডুলার যােগ হতে পারে।
খবর বলুমবার্গ চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এবিশ্লেষণ করেছেনবলুমবার্গের অর্থনীতিবিদ অ্যাড্রিয়ানা দুপিতা, অভিষেক গুপ্তওটুম আরলিক। তাদের মতে, মাধ্যমিকশিক্ষা, শিশু যত্ন ও নমনীয় কাজের ব্যবস্থাগুলােয় নারীদের প্রবেশাধিকার বাড়াতে পারলে আরাে নারীশ্রমশক্তিতে। প্রবেশ করবেন। আর তাদের হাত ধরে আগামী তিন দশকে বিশ্ব অর্থনীতি দ্রুত ও কার্যকরভাবেবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এসমীক্ষায় ৩৬র্টি উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতি বিশ্লেষণকরা হয়েছে।
বর্তমান সমাজে মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের লজ্জাই বেশী!
সমীক্ষায় প্রমাণ হিসেবে বলা হয়েছে, শ্রমশক্তিতে লিঙ্গ ব্যবধানবন্ধ করা অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমনভাবে মহামারী ও তার পরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার গুরুত্বপূর্ণ।সমীক্ষায় দেখা গেছে বিশ্বজুড়ে ২৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে কেবল ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ নারী শ্রমশক্তিতে জড়িত। যেখানে একই বয়সী৯২দশমিক১শতাংশশ্রমশক্তিতে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ মন্দা থেকে বেরিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিকে চালিত করতে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
বর্তমানে সেখানেও নারীরা পিছিয়ে পড়ছেন। এটিকে অর্থনীতিবিদরা দেশের প্রথম নারী মন্দা বলে অভিহিত করেছেন। কভিড-১৯মহামারীতে গত বছর পরিষেবা খাতে বিপর্যয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ডে কেয়ার সেন্টারগুলাে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে শিশুদের দেখভালের জন্য অনেক নারীকে বাধ্য হয়ে তাদের। চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে। মার্কিনসেন্সস ব্যুরাের তথ্য অনুসারে, জানুয়ারিতে প্রায় ১৪ লাখমা কর্মসংস্থানের বাইরে ছিলেন।
ফেব্রুয়ারির কাজের প্রতিবেদনেউঠে এসেছে, কর্মক্ষেত্রে কিছুটা বয়স্ক নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। যদিও সেটা প্রাক-মহামারীর স্তরেরতুলনায় অনেক কম। প্রতিবেদনে। বিশ্লেষণ করা দেশগুলাের মধ্যে শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশভারত। দেশটিরশ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার মাত্র ১৬ দশমিক৬ শতাংশ। এছাড়া সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের উইমেন, বিজনেস অ্যান্ডদল ২০২১ইনডেক্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও নারীদের পিছিয়ে থাকার চিত্র উঠে এসেছে।
১৯০টি দেশে আটটি সূচকের আলােকে ৩৫টি প্রশ্নের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মােট নম্বর ছিল ১০০]প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। দেশগুলাের ৭৫শতাংশইগড় পয়েন্ট অর্জন করতে পারেনি। কম পয়েন্ট পেয়ে তালিকায় সবচেয়ে নিচে রয়েছে ঘানা, ইয়েমেন, কুয়েত, সুদান, কাতার, ইরাক, ওমান, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের নাম।
এছাড়া অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণে বাধা না-থাকা দেশগুলাের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেবেলজিয়াম, কানাড়া, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স, পর্তুগাল ও সুইড়েন।পুরুষ ও নারীদের মধ্যে এ ব্যবধানবন্ধ করা গেলে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক মােট দেশজ উৎপাদন ৩০ শতাংশেরও বেশি যােগ হতে পারে।
বলুমবার্গের অর্থনীতিবিদ দুপিতা বলেছেন, অর্থনীতিতেনারীপুরুষের সমান অংশগ্রহণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর জন্য দেশগুলােকে তাদের অর্থনীতি নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং পুনরায়ডিজাইন করতে হবে। যাতে অর্থনীতি উৎপাদনশীল কাজের মাধ্যমে অতিরিক্ত শ্রমশক্তিকে স্বাগত জানাতে সক্ষম হয়। তবে অনেক দেশে নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে গভীর প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। এগুলাে দূর করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানাে সম্ভব হবে
আপনার মতামত জানান