অতিমারিতে হবু মায়েদের উদ্বেগ বেড়েছে নানা কারণে। গর্ভাবস্থায় কি টিকা নেওয়া উচিত? কোনও ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না তাে? হঠাৎ করে করােনা-সংক্রমিত হয়ে পড়লে কী করণীয়? বাচ্চার কোনও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে না তাে? নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন মেয়েদের এবং বাচ্চাদের জন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালের স্ত্রীরােগ চিকিৎসক বিমলা কুমারী।প্রশ্ন: অতিমারির উদ্বেগের মাঝে কী ভাবে নিজেদের সামলাবেন হবু-মায়েরা?উত্তর: অতিমারির কারণে মানসিক চাপ বেড়েছে দুনিয়া জুড়েই।
স্বাভাবিক ভাবেই গর্ভবতীরা আরও চিন্তিত হয়ে পড়ছেন। তবে গত দেড় বছরের অভিজ্ঞতায় আমরা এখন করােনা সম্পর্কে অনেক বেশি অবগত। গর্ভবতীদের জেনে রাখা ভাল যে, করােনাভাইরাসের সঙ্গে গর্ভপাত বা ভ্রণের ক্ষতি বা বাচ্চার বৃদ্ধির কোনও রকম সম্পর্ক রয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত কোনও গবেষণায় উঠে আসেনি। ৯০ শতাংশ কোভিড পজিটিভ গর্ভবতীরা সুস্থ সন্তান ধারণ করেছেন। আর পাঁচজনের মতাে গর্ভবতীদেরও কোভিড-বিধি মেনে চলা উচিত, কোনও রকম উপসর্গ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে কোভিড পরীক্ষা করিয়ে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও প্ড়ুনঃ দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করােনা আক্রান্ত হয়ে আরও ১৩৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
প্রয়ােজন মতাে ওষুধ শুরু করে দিতে হবে গােড়া থেকেই প্রশ্ন: গর্ভবতীদের জন্য কেন্দ্র টিকাকরণ শুরু করেছে। আপনি এ বিষয়ে কী পরামর্শ দিচ্ছেন?উত্তর: টিকাকরণ করিয়ে নেওয়াই শ্রেয়। নিয়ম অনুযায়ী গর্ভবস্থার তুলনায় মায়ের স্বাস্থ্যকেই আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কোভিডের প্রতিষেধক সদ্য তৈরি হয়েছে।
গর্ভবতীদের উপর প্রতিষেধকের প্রভাব নিয়ে আলাদা করে। গবেষণার কথা এখনও আমাদের সে ভাবে জানা নেই। তবে ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেহেতু দেখা যায়নি, তাই এগুলাে নিরাপদ বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। সব গর্ভবতী মহিলাদের কোভিডের দুটি টিকা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। যেহেতু
অনেক মহিলাই গর্ভাবস্থায় টিকা নিতে খুব একটা উৎসাহী নন, তাঁদের এ বিষয়ে কাউন্সিলিং করিয়ে আশ্বস্ত করতে হবে। প্রশ্ন: কোভিড সংক্রমিত হয়ে পড়লে গর্ভবতীরা কী করবেন?উত্তর: অতিমারির প্রভাব দেখে অনেকেই কোভিড পরীক্ষা করাতে ভয় পাচ্ছেন। আর ফল যদি পজিটিভ আসে, তা হলে আরও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছেন সকলে। গর্ভাবস্থায় কোভিড সংক্রমিত হলে সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্ত্রীরােগ চিকিৎসকের সঙ্গে যােগাযােগ করতে হবে। নিভৃতবাসে থেকে প্রয়ােজনীয় ওষুধ শুরু করতে হবে। নিয়মিত কিছু পরীক্ষা করিয়ে পরিস্থিতি নজরে রাখতে হবে।
অনেক গর্ভবতী কোভিড সংক্রমিতই উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গের সঙ্গে সুস্থ হয়ে যান। তাঁদের সন্তানের জন্মের সময়ে কোনও রকম জটিলতা তৈরি হয়নি। খুব অসহায় লাগলে এমন মায়েদের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে যাঁরা গর্ভাবস্থায় সংক্রমিত হয়েছিলেন।প্রশ্ন: হবু মায়েরা বাড়তি সতর্কতা কী ভাবে নেবেন?উত্তর: অনেক উপসর্গহীন গর্ভবতীদের কোভিড ধরা পড়তে পারে একদম শেষের দিকে কিছু পরীক্ষা করানাের সময়ে। কিন্তু প্যানিক করবেন না। উপসর্গহীন হলে বাড়িতে দু’সপ্তাহ নিভৃতবাসে থাকতে হবে।
ঠিক মতাে খাওয়াদাওয়া, গায়ে ব্যথা জ্বর বা কাশি হলে প্রয়ােজনীয় ওষুধ খেতে হবে। খুব মারাত্মক কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যােগাযােগ করুন। মাঝারি উপসর্গ বা গুরুতর উপসর্গ দেখা। দিলে হাসপাতালে ভর্তি করানাে আবশ্যিক।প্রশ্ন: বর্ষায় কোভিড ছাড়াও নানা রকম রােগের আশঙ্কা থাকে। কী ভাবে সাবধান হবেন?উত্তর: মশার উপদ্রব বাড়ে বর্ষায়। তাই টাইফোয়েড, কলেরা, ম্যালেরিয়া, ডায়েরিয়া, ডেঙ্গির মতাে রােগের আশঙ্কাও বাড়ে। তা ছাড়া জ্বর, কাশি, অ্যালার্জির বাড়বাড়ন্ত।
নানা রকম ভাইরাস-ব্যাকটিরিয়া এই সময়ে বাসা বাঁধে। গর্ভবতীদের খাওয়াদাওয়ার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। ফল-সজি খাওয়ার আগে ভাল করে ধুতে হবে। খাবার সারক্ষণ ঢেকে রাখতে হবে।নানা রকম ভাইরাস-ব্যাকটিরিয়া এই সময়ে বাসা বাঁধে। গর্ভবতীদের খাওয়াদাওয়ার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। ফল-সজি খাওয়ার আগে ভাল করে ধুতে হবে। খাবার সারক্ষণ ঢেকে রাখতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ফুটিয়ে খেতে হবে। মশারি টাঙিয়ে শােওয়ার অভ্যাস করুন। এমন পােশাক পরবেন, যাতে মশার কামর না খেতে হয়। বাড়ির আশেপাশে জল জমতে দেবেন না। নিজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাও জরুরি। প্রয়ােজনীয় টিকা নিয়ে রাখতে হবে। এবং যে কোনও ধরনের শারীরিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আপনার মতামত জানান