বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের একাধিক অঞ্চল ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসায় ভাসছেন কুড়েঘর ব্যান্ডের তরুণ গায়ক তাশরীফ খান। গত ১৩ জুন থেকে সিলেটের বানভাসি মানুষদের সহায়তা করা এ গায়ক ফেসবুক লাইভে আহ্বান জানিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি তুলেছেন।এই তাশরীফ খান অভিযােগ এনেছেন সিলেটের একটি জায়গায় চা খেতে গিয়ে পুলিশের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন তিনি, খেয়েছেন ধমকও।
ফেসবুক লাইভে এসে তরুণ এ গায়ক সে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, সারা দিন কাজ করার পর গতকাল আড়াইটার দিকে সিলেটের একটি জায়গায় আমরা লাল চা খাচ্ছিলাম। এরপর পুলিশের একটা গাড়ি এলাে। পুলিশের একজন অফিসার মােটামুটি ধমকের স্বরেই বললেন, আপনারা কোথাকার? এখানে কী করতেছেন?” আমি বললাম, স্যার আমরা এখানে ত্রাণ দিতে এসেছি ঢাকা থেকে।
আরও পড়ুনঃ বন্যাদুর্গত সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার অসহায় বানভাসি মানুষের পাশে বিজিবি সিলেট ও সুনামগঞ্জ
আপনাদের সিলেটের জন্যই কাজ করতেছি। আমরা চা খেয়ে এখান থেকে চলে যাব। এরপর আমাকে সরাসরি ধমক দেওয়া হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, ‘চলে যান এখান থেকে। গায়ক আরও যুক্ত করেছেন “এরপর আমি তাঁকে বলেছি, স্যার দয়া করে কোনাে নাগরিককে এভাবে ধমক দেবেন না। সিলেট বিপদে আছে।
আমরা সিলেটের জন্য কাজ করতে এসেছি। আমরা এখানে চুরি-চামারি করতে আসিনি। আমি উনাকে রিকোয়েস্ট করে বলেছি, স্যার চা শেষ করে আমি চলে যাব। তারপর আমাকে কী বলা হয়েছে শুনুন—তখন আমাকে আঙুল তুলে বলা হয়েছে, এখন তাে ভালাে করে বলেছি, এরপর খারাপ করে বলব। এক্ষুনি চলে যান এখান থেকে।
এ কথাটা শােনার পর আমি একটা শব্দও করি নাই।”লাইভে সেই পুলিশ সদস্যের উদ্দেশে তাশরীফ বলেন, স্যার দয়া করে এ সময়টাতে আপনারা একটু পাশে দাঁড়ায়েন। আমাদের পারলে একটু সাহস দিয়েন। আমাদের সাহসটা খুব দরকার। আপনারা সাথে থাকলে আমাদের মন, আমাদের কাঁধটা অনেক ভারী হয়ে যায়। তাশরীফ খান বর্তমানে তাঁর দল নিয়ে ১২ হাজার পরিবারকে সহায়তা করার জন্য কাজ করছেন।
বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় গেল সপ্তাহে নিজেই সিলেটে পৌঁছে গিয়েছিলেন ‘কুঁড়েঘর’ ব্যান্ডের এই তরুণ শিল্পী। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে ১৬ জুন প্রথমবার নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক থেকে লাইভ করে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে অর্থ সহায়তার আহ্বান করেন। প্রথম লাইভে খুব কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা পান।
এমন অভাবনীয় সাড়ায় আপ্লুত এই তরুণ শিল্পী সিলেটের স্থানীয় তরুণদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের বানভাসি মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেন। মানুষের পাঠানো টাকা স্বচ্ছতার সাথে লাইভে এসে সমস্ত বিবরণও দিতে দেখা যায় এই তরুণকে। বানভাসি মানুষের জন্য তরুণ শিল্পীল এমন উদ্যোগ প্রশংসিত হয় সর্বস্তরে।
১৯ জুন আরও একটি লাইভে এসে দ্বিতীয়বারের মতো বানভাসি মানুষের সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান করেন তাশরীফ। এবার ঘটে আরও অভাবনীয় ঘটনা। তরুণ গায়কের এমন প্রচেষ্টায় সাড়া দেয় আরও বেশি সংখ্যক মানুষ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এবার তাশরীফের ফান্ড তহবীলে জমা পড়ে কোটি টাকার বেশি!
এ বিষয়ে বুধবার রাতে তাশরীফ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, ‘কিছুটা সস্তির সাথে জানাচ্ছি দ্বিতীয় বার ফান্ড কালেকশন শুরু করার পর প্রথম ২৪ঘন্টায় আমরা ১ কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করেছি। এখন পর্যন্ত খুব সম্ভবত ১কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি এসেছে এবং আসছে বাকিটা কাল (বৃহস্পতিবার) হিসেব করে জানাব।’
আপনার মতামত জানান